এক এগারো ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘ক্যু উইদিন দ্য ক্যু’
- July 16, 2021
- Posted by: admin
- Category: নিজস্ব প্রতিবেদক
ড. সেলিম মাহমুদ
২৯ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে ইয়াজউদ্দিনকে দিয়ে ক্যু ঘটিয়েছিল দৃশ্যত আওয়ামী লীগ বিরোধী এবং বিএনপি-জামায়াতের পক্ষের শক্তি। আর এক-এগারো অর্থাৎ দ্বিতীয় ক্যু ঘটিয়েছিল সুশীলের আবরণে মূলত একই শক্তি। তারা দুই দলের বিরুদ্ধে কথা বলে সুশীল সমাজের শক্তির একটা মুখোশ পড়েছিল। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাকে সাব-জেলে বন্দি করে রাখার ঘটনাতেই পরিষ্কার হয়েছিল তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল। তারা মাইনাস টু তত্ত্বের নামে মূলত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকেই টার্গেট করেছিল। তারা একাধিক মিথ্যা মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাজা প্রদান করে জননেত্রীকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বাইরে রাখতে চেয়েছিল। এটি অনেকটা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মতো। এদেশের জনগণের তীব্র প্রতিবাদ আর শেখ হাসিনার প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণে এক-এগারোর সরকার সেদিন পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। তারা শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। ২০০৮ সালের ১১ জুন জননেত্রীর মুক্তির পর রাষ্ট্রযন্ত্রে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করে। ষড়যন্ত্রকারীদের কেউ কেউ পর্দার আড়ালে যেতে শুরু করে। এদেশের জনগণের তীব্র চাপে নতি স্বীকার করে এক-এগারো সরকার একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। শেখ হাসিনার প্রতি এদেশের মানুষের তীব্র ভালোবাসা ও সমর্থনের কারণে ২৯ অক্টোবরের ইয়াজুদ্দিনের ক্যু আর এক-এগারোর ব্যাকআপ ক্যু পরাস্ত হতে বাধ্য হয়েছিল। তার পরের ইতিহাস আমাদের সবার জানা ।
যদি সেদিন জননেত্রীকে ওই অশুভ শক্তি বাংলাদেশের রাজনীতির বাইরে রাখার ষড়যন্ত্রে সফল হতো, তাহলে আজ বাংলাদেশের অবস্থা কি হতো, সেটি চিন্তাও করতে পারি না। আল্লাহর অশেষ রহমতে এদেশের জনগণের জন্য আর মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শের বাতি প্রজ্বলিত রাখার জন্য প্রিয় নেত্রী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
তিনি শাসনভার নিয়েছিলেন জনগণের জন্য, আমাদের সকলের জন্য। গত এক যুগে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এক কার্যকরী রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়েছে l শেখ হাসিনার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে l তার অসাধারণ দক্ষতা, মেধা, সাহস, দূরদর্শিতা ও অসীম দেশপ্রেমের কারণে তিনি ভূরাজনীতিকে আমাদের অনুকূলে আনতে সক্ষম হয়েছেন l উন্নয়নশীল বিশ্বের খুব কম রাষ্ট্রনায়কই এই ধরণের সফলতা দেখতে পেরেছেন l তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ কোনো উন্নয়ন সহযোগী কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী নয় l শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল বিশ্বে নতুন অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের উত্থান ঘটেছে l বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই বাংলাদেশ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী কুখ্যাত হেনরি কিসিঞ্জারের ষড়যন্ত্রমূলক অপবাদকে মিথ্যা প্রমাণ করেছেন l তিনিই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিরোধী শক্তির সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে এবং এই অপশক্তিকে পরাভূত করে জাতির পিতাকে এদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন l তার কারণেই জাতির পিতার খুনিদের বিচার হয়েছে l কিছু খুনি পলাতক থাকায় বিচারের রায় এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি l
৩০ লাখ শহীদের রক্তে লেখা আমাদের সংবিধানকে শেখ হাসিনাই কলঙ্কমুক্ত করেছেন। পঁচাত্তরের পর অসাংবিধানিক সরকারের সময় এই পবিত্র সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। তিনিই এই সংবিধান থেকে মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী সব বিধান বাতিল করেছেন। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানে আবার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। উন্নয়নশীল বিশ্বে তিনিই একমাত্র সফল রাষ্ট্রনায়ক যিনি সংবিধানকে সকল অপশক্তি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ তৈরি করেছেন যার সুফল আজ গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষ পাচ্ছে। তিনিই এদেশে গণহত্যাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধকারীদের গাড়িতে যখন জাতীয় পতাকা উড়ছিল, তখন এদেশে তাদের বিচার হবে না – এই রকম একটা ধারণায় মানুষ যখন হতাশাগ্রস্ত ছিল, তিনিই তখন জাতির সামনে আশার আলো প্রজ্বলিত করেছিলেন। জাতির পক্ষে ঘোষণা দিয়ে এই নরঘাতকদের তিনিই বিচার করেছেন।
রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু মৃত্যুর হার, পরিবেশ, কৃষি, শিল্পায়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, জ্বালানী নিরাপত্তা, বিনিয়োগ ইত্যাদিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি অনুকরণীয় রাষ্ট্র। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উপনীত হয়েছে। দেশের এই যুগান্তকারী সাফল্যের কৃতিত্ব একমাত্র জননেত্রীর। মানুষের প্রতি তার মমত্ববোধ আর ভালবাসার কারণে তিনি আজ বাংলাদেশকে বানিয়েছেন একটি কার্যকরী কল্যাণমুখী রাষ্ট্র। এদেশের মানুষের জন্য তার প্রবর্তিত ‘সোশ্যাল সেফটি নেট’ বা সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বে এক অনন্য ঘটনা। জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা সারা বিশ্বে মহা বিপর্যয় সৃষ্টিকারী করোনা মহামারি অসাধারণ দক্ষতা, পারদর্শিতা, সাহস আর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে মোকাবিলা করছেন। বৈশ্বিক এই মহামারিতে মানুষ বাঁচানোর যুদ্ধে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন l
আজ ১৩ বছর পর প্রিয় নেত্রীর কারান্তরীণ দিবসে তার প্রতি জাতির পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তিনি এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বহু নির্যাতন সহ্য করেছেন। তিনি ফিরে এসেছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ অন্ধকার থেকে আলোর পথে। তিনি বাংলাদেশকে অনেক কিছু দিয়েছেন। বাংলাদেশের সব অর্জন জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণেই। তিনি একজন সংগ্রামী নেতা থেকে কালজয়ী রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন l এদেশের সকল মানুষের কল্যাণের কথা, বিশেষভাবে দরিদ্র-অসহায় মানুষদের কথা, সবসময় প্রিয় নেত্রীর চিন্তা চেতনায় বিদ্যমান। পিতার মতো এদেশের মানুষকে ভালবেসে তিনি তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন। গত বছর জননেত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘আমি তো এখানে বেঁচে থাকার জন্য আসিনি। আমি তো জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে এসেছি, এটাতে তো ভয় পাওয়ার কিছু নেই’।
এক-এগারোর প্রেতাত্মারা এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, এখনো হুংকার দিচ্ছে l আমাদের মনে রাখতে হবে, যতদিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নীতি, আদর্শ, দর্শন ও কৌশল নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, কোনো অপশক্তিই বাংলাদেশকে পরাভূত করতে পারবে না। তার দেখানো এই পথ ধরেই আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পৌঁছে যাবো ইনশাল্লাহ l
ড۔ সেলিম মাহমুদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ