১৫ আগস্টের অসমাপ্ত কাজ ২১শে আগস্টে ঘটাতে চেয়েছিল ঘাতকরা: ড. সেলিম মাহমুদ

২১শে আগস্টের যে ঘৃণিত হত্যাকাণ্ড এটা কোন বিচ্ছিন্ন হত্যাকাণ্ড নয়, এটা ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ধারাবিহিকতায় এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে প্রশাসনের একটি অংশ সেদিন জড়িত ছিল কিন্তু ২১শে আগস্টের হত্যাকাণ্ডে পুরো সরকার তথা প্রশাসনের সবাই সেদিন জড়িত ছিল। জিয়াউর রহমানের কুপুত্র তারেক জিয়া কিন্তু সেই সময়ের তাদের টাকার আস্তানা হাওয়া ভবনে বসে সেই সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং তার সরকারের একজন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সহযোগিতায় অস্ত্র, অর্থ এবং প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় রচনা করেছিল একাত্তরের পরাজিত ঘাতকরা এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা। তারা ১৯৭৫ সালের অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করার জন্য ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছিল।
 
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৪৩৮তম পর্বে শনিবার (২১ আগস্ট) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান,  ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস এন্ড রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিজের গভর্নিংবডি সদস্য, সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, জার্মান দূতাবাসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনারারি কনস্যুলেট, জার্মানিতে ফর বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট-ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
 
ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ২১শে আগস্টের ঘটনাকে আমরা একাডেমিক ভাষায় বলি এনালজিকাল এক্সটেনশন। অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা তার দুই কন্যাকে বাংলাদেশে তখন পেয়ে যেতো তাহলে দুই কন্যাকেই তারা সেদিন হত্যা করতো। বঙ্গবন্ধু পরিবারের আর কেউ থাকতো না। তাদের যে মূল মিশন ছিল যে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে তারা সেদিন তাদের ঘাতক আক্রমনে আনতে পারেনি যেটা তাদের আনুষ্ঠানিক বেরথতা ছিল। তারপরে তারা কিন্তু অইবছরে  তেশরা নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে অর্থাৎ জাতির পতার অবর্তমানে যে ৪ জন নেতৃত্ব বাংলাদেশে ওই সময় আওয়ামী লীগের পতাকাকে সামনে নিয়ে যেতে পারতো তাদেরকেও জেল খানায় ঢুঁকে খুনিরা নির্বিচারে তাদের গুলি করে হত্যা করলো। তারপর এতো বছর পরে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টে গ্রেনেড হামালার মাধ্যমে জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ সেদিন সেখানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাকর্মীদের সবাইকে মেরে আওয়ামী লীগ সহ বাংলাদেশের নেতৃত্ব শুন্য করার একটা চক্রান্ত্র ছিল। সেই চক্রান্ত্রের মূল পরিকল্পনা হাওয়া ভবনে খুনি তারেক জিয়া বা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বাদেও আমার ধারনা সে সময় দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা জড়িত ছিল। ২১শে আগস্ট ছিল তাদের ১৫ই আগস্টের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার অপারেশন মাত্র। একুশে আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরও একটি কালো অধ্যায়। রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের দিয়ে সংসদের প্রধান বিরোধী দল, এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নেতৃত্বহীন করে দেয়ার এক নৃশংস ঘটনার দিন এই একুশে আগস্ট। এ হামলার মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করা এবং আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করে হত্যা, ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী করা। আল্লাহ্র অশেষ রহমতে সেদিন আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাকর্মী বেঁচে গিয়েছিলেন। ২০০৪ সালের এই দিনে গ্রেনেড ছুড়ে হত্যার চেষ্টা হয় জাতির পিতার কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এই হামলার নেপথ্যে যারা ছিল এবং তাদের হামলার উদ্দেশ্য কী ছিল, হামলায় বেবহিত গ্রেনেড কোথা থেকে এসেছে এবং এই ঘটনায় তৎকালীন সরকারের সম্পৃক্ততার তথ্য আদালতের রায়ে এখন অনেকটাই স্পষ্ট এবং দেশবাসীও তা অবহিত। এখন অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে অপশক্তি যে উলটো পথে দেশ-জাতিকে ঠেলে দিয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ড ছিল মূলত একটি প্যাকেজের মাধ্যমে যেখানে পরাশক্তি ছিল আন্তর্জাতিক শক্তি ও এতে সহযোগিতা করেছে দেশীয় কিছু দোসররা যাদের মূল পরিকল্পনাকারি ছিলেন খুনি জিয়া। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় যে বর্বরোচিত ঘটনা ঘটানো হয়েছিল, সেটি যে অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী নীলনকশা ছিল যা সেই ১৫ই আগস্টের অসমাপ্ত কাজের অংশ।