বিএনপির আদর্শ ও একজন আলালের নিম্নরুচি

ড. সেলিম মাহমুদ

আলালের ঔদ্ধত্যপূর্ণ অশ্লীল ও অশালীন বক্তব্য বিএনপির আসল চরিত্রকেই প্রতিনিধিত্ব করে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এদেশে কেবল হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতিই প্রবর্তন করেননি, রাজনীতিতে শঠতা, মিথ্যাচার, অশ্লীলতা, ইতিহাস বিকৃতি, দুর্বৃত্তায়ন এবং বিচারহীনতার নীতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জিয়া এবং তার আদর্শিক লিগেসি বহনকারীরা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যিনি দারিদ্র্যপীড়িত, নানাভাবে সংকটাপন্ন ও অনগ্রসর বাংলাদেশকে আজ বিশ্বের নেতৃত্বের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, তাকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং অশ্লীল ও অশালীন বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে গোটা জাতি স্তম্ভিত। আমরা বিস্মিত হয়েছি, এ রকম ঔদ্ধত্য দেখানোর ভয়ংকর সাহস তিনি কীভাবে পেলেন! এই ঘটনায় জাতির হৃদয়ে আজ রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

শেখ হাসিনা কেবল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রনায়ক নন, তিনি জাতির পিতার সরাসরি উত্তরাধিকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালি জাতিকে একটা রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন, তার নাম বাংলাদেশ। তিনি স্বাধীনতার প্রণেতা। যেকোনো সত্তার নামের সঙ্গে তার জনক বা পিতার নাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকে। জনকের নাম এবং তার অস্তিত্ব চিরন্তন।

সরাসরি উত্তরাধিকার হিসেবে শেখ হাসিনা আজ জাতির পিতাকেই প্রতিনিধিত্ব করছেন। শেখ হাসিনার ওপর আঘাত মানে রাষ্ট্রের ওপর আঘাত, জাতির ওপর আঘাত। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ওপর এই আঘাত সংবিধান ও অপরাপর আইনানুযায়ী নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ। অবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা জরুরি।

শেখ হাসিনা কেবল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন, বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি শুধু বাংলাদেশের সরকারপ্রধানই নন, তিনি সমকালীন বিশ্বে একজন প্রভাবশালী ও শক্তিধর রাষ্ট্রনায়ক, বিশ্ব রাজনীতিতে যার সফল নেতৃত্ব ও কূটনীতির কারণে সমগ্র উন্নয়নশীল বিশ্ব উপকৃত হয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাতা, বাঙালির ভাগ্য পরিবর্তনকারী এবং বাঙালির বিশ্ব জয়ের মহানায়ক।

আলালের ঔদ্ধত্যপূর্ণ অশ্লীল ও অশালীন বক্তব্য বিএনপির আসল চরিত্রকেই প্রতিনিধিত্ব করে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এদেশে কেবল হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতিই প্রবর্তন করেননি, রাজনীতিতে শঠতা, মিথ্যাচার, অশ্লীলতা, ইতিহাস বিকৃতি, দুর্বৃত্তায়ন এবং বিচারহীনতার নীতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জিয়া এবং তার আদর্শিক লিগেসি বহনকারীরা।

১৯৭৫ সালে সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার পর থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন দশক ধরে জাতির পিতা, তার পরিবার এবং আওয়ামী লীগের চরিত্র হননের চেষ্টা হয়েছিল। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নানা কল্পকাহিনি প্রচার করে তারা এই কাজটি করেছিল। এত বছর পরও তাদের চরিত্র বদলায়নি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এদেশে বিচারহীনতার নীতির প্রচলনকে বন্ধ করে দিয়ে প্রকৃত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার এই নীতিতে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। যে অপরাধ করবে, তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে। দলমতনির্বিশেষে তিনি এই নীতির প্রয়োগ করে আসছেন। আওয়ামী লীগের বহু নেতা এবং মন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে অশালীন মন্তব্যের জন্য মন্ত্রিত্বসহ দলীয় পদ হারিয়েছেন।

এই কদিন আগে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান অশালীন বক্তব্যের জন্য মন্ত্রিত্বসহ দলীয় পদ হারিয়েছেন। এর আগে আরেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিত্বসহ দলীয় পদ হারিয়ে জেলে পর্যন্ত গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার বিভিন্ন মেয়াদে আইন লঙ্ঘনের কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কেএস নবীসহ একাধিক মন্ত্রী তাদের পদ হারিয়েছিলেন।

আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করলাম, বিএনপি নেতা আলালের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিএনপি এখনও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বরং বিএনপি নেতৃত্ব আলালের বক্তব্যটিকেই ডিফেন্ড করে যাচ্ছে। এটি তাদের বিকৃত মানসিকতারই পরিচায়ক। তাদের এই ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের প্রতি নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করার ভাষা আমাদের জানা নেই।

আলালের এই অশ্লীল ও অশালীন বক্তব্য শুধু বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রতি অবমাননা নয়, এটি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি অবমাননা। এটি পরিষ্কার রাষ্ট্রদ্রোহিতা। আজ জাতির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লাখ লাখ কর্মী-সমর্থকসহ কোটি কোটি মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে। তারা আলালের বিচার চাইছে। তাকে এখনই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি অবমাননাকারীদের কোনো ঠাঁই নেই।

লেখক: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।