প্রাকৃতিক সম্পদে রাষ্ট্রীয় মালিকানা আনেন বঙ্গবন্ধু: সেলিম মাহমুদ

ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশে এ যাবত যা কিছু উন্নয়ন হয়েছে, তার সবটুকুই বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রদত্ত গ্যাস সম্পদের কারণে। আজ বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতসহ যে কয়েকটি খাতে আমরা বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছি, এর মূল কারণই ছিল জাতির পিতা দেয়া গ্যাস সম্পদ।’

বিদেশি শোষণ চিরতরে বন্ধ করার লক্ষ্যে দেশের সব প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।

বিশ্ব জ্বালানি দিবস উপলক্ষে এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা যে গ্যাস সম্পদ আমাদেরকে দিয়ে গেছেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা এবং সার্বিক উন্নয়নের জন্য সেই সম্পদ রক্ষা করেছিলেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর দেয়া গ্যাস সম্পদ রপ্তানি করতে দেননি বলে ২০০১ সালের ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি।’

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য বিদেশি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর স্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে জানান সেলিম মাহমুদ। বলেন, সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, জাতীয় স্বার্থে নেয়া বঙ্গবন্ধুর সেই সিদ্ধান্তগুলোও ষড়যন্ত্রের অন্যতম কারণ ছিল।

ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি শোষণ চিরতরে বন্ধ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সকল প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর কাছে অজানা ছিল না যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ঠান্ডা লড়াইয়ের সময়ে বিশ্বব্যাপী কিছু জাতীয়তাবাদী নেতা নিজেদের দেশে বহুজাতিক কোম্পানির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রাকৃতিক ও জ্বালানি সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। তাদের কেউ কেউ হত্যার শিকারও হয়েছিলেন।

‘সেটি জানা সত্ত্বেও, তিনি ঔপনিবেশিক শক্তি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অনুকূলে খনিজ ও জ্বালানি সম্পদের ওপর প্রদত্ত ইজারাভিত্তিক মালিকানা জাতীয় স্বার্থে বাতিল করে সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদে এ সম্পর্কিত বিধান অন্তর্ভুক্ত করেন’-বলেন সেলিম মাহমুদ।

তার মতে, এই ধরনের বিধান সমকালীন সময়ে পৃথিবীর খুব কম দেশই তাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছিল। জাতির পিতা প্রবর্তিত এই সাংবিধানিক বিধানের আলোকে পরবর্তীতে তিনিই নানামুখী আইনি, নীতিগত, নির্বাহী ও রেগুলেটরি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি আত্ম-নির্ভরশীল ও শক্তিশালী জ্বালানি খাত তৈরি করে গিয়েছিলেন। এর মূল লক্ষ্য ছিল দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করা।

সেলিম মাহমুদ জানান, বঙ্গবন্ধু তার দৃঢ় মনোবল, মেধা, সাহস ও সুকৌশলের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বহুজাতিক কোম্পানি শেল ইন্টারন্যাশনালকে পাঁচটি বৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র (তিতাস, বাখরাবাদ, রশিদপুর, কৈলাসটিলা ও হবিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র) মাত্র ১৭.৮৬ কোটি টাকায় বাংলাদেশের কাছে বিক্রয় করতে বাধ্য করেছিলেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ১২ লাখ কোটি টাকা। এটি কেবল আর্থিক মূল্য; এর অর্থনৈতিক মূল্য তার চেয়ে বহুগুণ বেশি।

তার মতে, স্বাধীন বাংলাদেশে গত চার দশকে যতটুকু শিল্পায়ন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, তার মূল চালিকা শক্তি ছিল বঙ্গবন্ধুর নামমাত্র মূল্যে কেনা গ্যাস ক্ষেত্রগুলো। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এ যাবত যা কিছু উন্নয়ন হয়েছে, তার সবটুকুই বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রদত্ত গ্যাস সম্পদের কারণে। আজ বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতসহ যে কয়েকটি খাতে আমরা বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছি, এর মূল কারণই ছিল জাতির পিতা দেয়া গ্যাস সম্পদ।’

সেলিম মাহমুদের মতে, জাতির পিতার পর শেখ হাসিনাই একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক যিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও বাধা উপেক্ষা করে জাতির পিতার এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নানামুখী কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দেশ আবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে।