প্রতিটি বাঙালির সকল ব্যক্তিগত অর্জন বঙ্গবন্ধুর কারণেই: ড. সেলিম মাহমুদ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেছেন, প্রতিটি বাঙালির সকল ব্যক্তিগত অর্জন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কারণেই  হয়েছে। তিনি আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছেন বলে আজকে আমরা সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। কেও ব্যাংকের মালিক, কেও ব্যাংকের এমডি, কেও শিল্পপতি, কেও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কেও বিচারপতি, রাষ্ট্রদূত, কেও বাংলাদেশের কোটায় স্কলারশিপ পেয়ে বিদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রী পেয়েছি, আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। 

ড. সেলিম মাহমুদ গতকাল মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সিটি ব্যংক আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর এক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে এই কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে আমাদের জীবনে বঙ্গবন্ধু কেন গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু যদি বাংলাদেশ স্বাধীন না করতেন তাহলে ভারতের সেভেন সিস্টার্স ঘেরা আজকের বাংলাদেশ পাকিস্তানের একটা রাজ্য হিসেবে বড়জোর আসাম কিংবা ত্রিপুরার মতো একটি রাজ্য থাকতো। একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন জনপদ হিসেবেই থাকতো। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আজ শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, সারা বিশ্বে এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি। আমরা সবাই আমাদের জীবনে যা কিছু পেয়েছি, তার সবটুকুই বঙ্গবন্ধুর কারণে।

ড. সেলিম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল কারণ তিনি তদানীন্তন বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি শুধু বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই করেননি, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করেছিলেন। বাংলাদেশকে একটা শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে গেছেন। জিয়া-এরশাদের দুই সামরিক সরকার, খালেদা জিয়ার দুই মেয়াদের সরকার দেশকে অর্থনৈতিকভাবে অনেক পিছিয়ে দিয়েছিলো। জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আবার বাংলাদেশকে জাতির পিতার অর্জিত জায়গায় নিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর পর শেখ হাসিনাই বাংলাদেশকে আবার দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ অর্থনীতিতে পরিণত করেছেন।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা এদেশে সকল বিদেশী শোষণ বন্ধ করার লক্ষ্যে সাংবিধানিক ও আইনি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। দেশের সকল প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পদ তিনিই বিদেশী শক্তির কাছ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। বাংলাদেশে এযাবৎ গার্মেন্টস সহ যতটুকু শিল্পায়ন হয়েছে, তার মূল চালিকা শক্তি ছিল বঙ্গবন্ধুর দেয়া গ্যাস সম্পদ।

ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, খুনীরা সপরিবারে জাতির পিতাকে শুধু হত্যাই করেনি, তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে খুনী চক্র ও তাদের সুবিধাভোগীরা জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছে। জাতির পিতার নামটি পর্যন্ত তারা নিষিদ্ধ করেছিল। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, এই জাতির ভাগ্য পরিবর্তনকারী, এই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা মানুষ যাতে জানতে না পারে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আদর্শের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের ভয় শুধু একটি নামে – সেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই জন্যই তারা এই নাম নিষিদ্ধ করেছিল, সেই জন্যই তাদের এই মিথ্যাচার।

সিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে জাতির পিতার জীবন ও কর্মের উপর এই আলোচনা সভায়  ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কথা সাহিত্যিক, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের উপর রচিত উপন্যাস `আগস্ট আবছায়া`র লেখক মাশরুর আরেফিন বক্তব্য রাখেন। মাশরুর আরেফিন তাঁর লিখিত `আগস্ট আবছায়া`র প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। তাঁর উপন্যাস থেকে জাতির পিতার মরদেহ ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়া নিয়ে যাওয়ার ঘটনা এবং পিতার মরদেহ সম্পূর্ণ অসম্মানজনকভাবে তড়িঘড়ি করে দাফনের চেষ্টার এক মর্মস্পর্শি বর্ণনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি চরম অন্যায় করা হয়েছে বহু বছর ধরে। ইতিহাস আজ তার জবাব দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলেই আজ আমি ব্যাংকের এমডি। বাংলাদেশ না হলে হয়তো আমি বড়োজোর ক্যাশ অফিসার থাকতাম।

জাতির পিতার জীবন ও কর্ম নিয়ে এই আলোচনা সভায় সিটি ব্যাংকের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জাতির পিতা সহ ১৫ আগষ্টের শহীদগণের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।